পরিবর্তন হয়ত এবারে আসবে।
আবার বিক্রিত পত্রিকার বিকৃত সম্পাদকীয়ের সুর বদলে যাবে। কবিতার শব্দচয়ন পাল্টে যাবে। গদ্যের ভাষা বদলে যাবে। শিকড় নতুন জমিতে গড়বে। আগাছা নতুন আলোর সন্ধানে থাকবে। সুযোগসন্ধানীরা বাসা বদলাবে। এখন একটা বড় অংশ এই রাজনীতির কুমিরডাঙ্গা খেলায় জলে আর তাই নামছে না। তারা অপেক্ষায় আছে।
আমরা চাইব সত্যিকারের পরিবর্তন যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, কর্মসংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসবে, শিক্ষার মানে উন্নতি হবে, শিল্প বাড়বে। দুর্নীতি, বিশৃংখলা আর অপশাসনের বদলে সুশাসন আসবে, যোগ্যতার বিচার অনুযায়ী লোকে চাকরি পাবে। যেখানে মাথার উপরে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়বে না, লক্ষ লক্ষ লোকের টাকা চুরি যাবে না, অনুপযুক্ত লোক অন্যায়ভাবে চাকরি পাবে না, রাজনীতি ব্যাংক ব্যালান্স বাড়ানোর প্রধান উপায় হবে না।
একটা সময় আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ, শ্রী বিধান চন্দ্র রায়, শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, শ্রী অজয় মুখারজীর মতো মানুষরা যাদের কাছে রাজনীতির অর্থ ছিল আত্মত্যাগ। আমরা কখনও তো ভাবি না এঁরা কোন দলে রাজনীতি করতেন। গত চল্লিশ বছর ধরে আমরা শিল্প, শিক্ষাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে পিছিয়েছি। সে জায়গা থেকে খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়ে বুদ্ধদেব -এর মতো সৎ মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরে শিল্পের জন্য ভালো কিছু করতে চাইলেও, বাংলার মানুষ সেটা করতে দেয় নি।
রাজনীতি এখন সবথেকে নির্ভরযোগ্য পেশা, রাজনীতি একটা বড় অংশের জীবিকা শুধু সময় মতো পোশাক বদলালেই হল।
আমরা চাইব রাজনীতিতে ভালো শিক্ষিত মানুষ আসুক। শুধুমাত্র অশিক্ষিত অভিনেতা অভিনেত্রীদের ভিড়ে রাজনীতি যাত্রার মঞ্চ না হয়ে উঠুক। শুধু সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা রাজনীতির উঠোনে মাতামাতি না করুক।
ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালে আব্বাস সিদ্দিকীর মতো নেতার মুখ দেখা যাচ্ছে যা সাম্প্রদায়িকতার অর্থ বদলে দিচ্ছে। ধর্মনিরপক্ষেতা মানে অন্ধের মতো শুধু একটা ধর্মের তোষণ নয়। সাম্প্রদায়িকতা শব্দের অর্থ এখন শুধু সুবিধেবাদী বুদ্ধিজীবীদের কাছে হিন্দুদের বিরোধিতা। অবধারিতভাবে এ রাজ্যেও ভোটে হিন্দুত্বের ঝড় আসবে যদিও সেটা অভিপ্রেত নয়।
আমরা চাইব সত্যিকারের ধর্ম নিরপেক্ষতা, যেখানে আমরা কাউকে ধর্মের পরিচয়ে দেখব না। চাইব সব জাতি ধর্মের মানুষের একই রকম বিকাশ হোক।
সঠিক পরিবর্তন কিন্তু আপনার হাতেই। আগামী প্রজন্মকে যেন আমরা ভবিষ্যৎহীন অন্ধকারের দিকে আর না ঠেলে দিই। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনার সন্তান কাজের সন্ধানে রাজ্যের বাইরে যেতে বাধ্য হোক বা ব্যর্থ হয়ে ঘরের কোনে মুখ লুকোক। আমরা নিশ্চয়ই চাইব না আমাদের রাজ্য আরেকটা সিরিয়া বা আফগানিস্থান হয়ে যাক। আমরা কিন্তু সেদিকেই এগোচ্ছি। আমরা খেলা চাই না, জীবন ফিরে পেতে চাই।
পুনশ্চ
যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা উধাও, অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে কোন রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয় নি, হাসপাতালে বেড কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, কোভিড টেস্টিং করার কোন উপায় নেই, লক্ষ লক্ষ মানুষ অসহায়, সেখানে এই ফলাফল নিয়ে কাদের উৎসব করার মানসিকতা আছে, জানি না।
ভোটের ফলাফল নিয়ে এই পরিস্থিতিতে কিছু বলা উচিত নয়। তবু বলছি। কারণ গল্প শুরু করে শেষ না করলে তো আর হয় না। আর আমার গল্প কোন দাদা বা দিদি পাওয়ারে এলো, তা দিয়ে নির্ধারিত হয় না।
এবারে ভোটে শেষ পর্যন্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ সামনে আসে নি, শিল্পশিক্ষা বা চাকরির দাবী সামনে আসে নি।
আসলে সেটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বাঙালীর দুটো আইডেন্টিটির মধ্যে লড়াই – এ। বাঙালী – অবাঙ্গালী((বাংলা সংস্কৃতি, মনন, সুগভীর চিন্তাভাবনা, বাংলা ভাষা – সাহিত্য যার অঙ্গাঙ্গী অংশ)) ও ধর্মের ভিত্তিতে আইডেন্টিটি।
এই দ্বিতীয় আইডেন্টিটিটা তৃণমূলই তোষণের মাধ্যমে সামনে নিয়ে এসেছিল। বামপন্থী আমলে এটা আড়ালে ছিল।
কিন্তু প্রথম আইডেন্টিটা হল আসল আইডেন্টিটি, বাঙালীর পরিচয়, যা সত্যি অনন্য। যে পরিচয় যে কোন বাঙালী মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর দিয়ে গড়ে ওঠে, সেই পরিচয়। সেখানে বাঙালী সাজা যায় না। তাকে আপনার করতে যা করা দরকার, সেটা বিজেপির নেতাদের জানা ছিল না। সেখানেই তারা সফল হয় নি। এর বাইরে বেশ কিছু ভুলভাল লোক, অভিনেতা- অভিনেত্রী( সব দলেই) দলে নিয়ে এসেছিল, যারা শুধুই স্বার্থের জন্য রাজনীতিতে এসেছে। তবু বিজেপি কিন্তু অনেকটাই সফল। ৮০টা সিট পেয়ে বিরোধী থাকার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা থাকে। বিজেপি দায়িত্বশীল বিরোধীর দায়িত্ব পালন করলে, বাঙ্গালীদের সঙ্গে একাত্ম হলে পারলে, ধর্ম নিয়ে বেশী মাতামাতি না করলে, পরের বার অনেক ভালো ফল করবে। বাংলারও অনেক ভালো হবে।
আমি একই সঙ্গে আনন্দিত ও দুঃখিত(এক সময় যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় এস এফ আই -এর লীডারশিপে ছিলাম) যে বামপন্থীরা তাদের ঔদ্ধত্য, না জেনে মুখস্থ কিছু বুলি আওড়ানোর ও সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষতার অভাবের উপযুক্ত জবাব পেয়েছে। শূন্য। ভাবা যায়! আর ফেরার কোন জায়গা থাকল বলে মনে হয় না।
এবার তৃণমূল প্রসঙ্গে আসি। অন্যায়ের শিকড় খুব গভীরে ছড়িয়ে পড়লে হঠাৎ করে তার পরিবর্তন হয় না। কারণ সে শিকড় তৃণমূলস্তরে ছড়িয়ে থাকে। তার পরিবর্তন আস্তে আস্তে হয়। আশা রাখি দিদি তাঁর ভুল বুঝতে পারবেন। নৈরাজ্য না বাড়িয়ে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক পথে এগোবেন। মানুষের বিশ্বাসের উপযুক্ত সন্মান দেবেন।
Wow. Such a beautiful😍✨❤ and amazing vlog.
ReplyDelete